সম্পাদকীয়, ভয়েস অব ফেনী।
জনাব তারেক রহমান এখন বিএনপিতে এখন কার্যত ‘মাইনাস’! অনেকটা ‘ঢাল নেই তলোয়ার নেই; নিধিরাম সর্দার’!! সবাই কি অবাক হচ্ছেন?
বিএনপির অন্ধ ও দলকানা সমর্থকদের অনেকে হয়তো আমার সাথে দ্বিমত পোষণ করে গালমন্দ করবেন; কিন্তু এখনকার বাস্তবতা এটাই!
তারেক রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হলেও বাস্তবে তথা মাঠ পর্যায়ে বিএনপির নিয়ন্ত্রণ মূলত তারেক রহমানবিরোধী ও ভারত-অনুগত মির্জা ফখরুল, সালাহ উদ্দীন আহম্মদ, মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু, ব্যারিস্টার রুমীন, শ্যামা ওবায়েদ, দুদু, ভুলু, রিজভীদের হাতে। বহু আগে থেকে সিনিয়র নেতাদের অধিকাংশই তারেক রহমানের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তবে এদের মূল সমন্বয়ক এখন আগামীদিনের সম্ভাব্য মহাসচিব পদের দৌঁড়ে অনেকটা এগিয়ে থাকা ও ভারতীয় “র” এর সুপ্রশিক্ষিত সালাহ উদ্দীন আহমেদ। আর এটা হলে বিএনপির ধ্বংস অনিবার্য।
মহান জুলাই বিপ্লবের অনেক আগেই বিএনপির প্রায়োগিক নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব কার্যত পুরোপুরি হাইজ্যাক হয়ে গেছে। এটা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার কিংবা পশ্চিমাদের কেউ করে নি। ভারত সুপরিকল্পিত ভাবে এটা করেছে। আওয়ামী শাসনামলে বিএনপির মধ্যে ভারত অনুগত একটি গ্রুপ তৈরি করা হয়েছে। এই গ্রুপের মূল সমন্বয়ের দায়িত্বে আছে মূলত সালাহউদ্দীন আহমেদ। জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে বাংলাদেশের ওপর আধিপত্য ও নিয়ন্ত্রণ হারানোর পর ভারত এখন প্ল্যান-বি বাস্তবায়ন করছে বিএনপিকে দিয়েই।
তারেক রহমানের সাথে ইগো দ্বন্দ্ব থাকায় মির্জা ফখরুল, সালাহউদ্দীন, আব্বাস, খসরু, রুমিন, শ্যামা ওবায়েদ, দুদু, ভুলু, রিজভীসহ অধিকাংশ নেতাই হাসিনা এবং ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পাতা জালে (হানিট্র্যাপ; অবৈধ সুবিধা গ্রহণসহ) আটকা পড়েছেন। ওনারা তারেক রহমানের নেতৃত্ব মেনে নিতে নারাজ। তারেক রহমান বনাম বিএনপির সিনিয়রদের মধ্যকার দূরত্বকে কাজে লাগানো হচ্ছে ভারতের প্ল্যান-বি এর কার্যকর বাস্তবায়নে এবং এক্ষেত্রে ভারত অনেকটা সফলও হয়েছে।
কাজেই এখনকার মাঠ পর্যায়ের বিএনপি সেই শহীদ জিয়াউর রহমান বা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিএনপি নয়। এই বিএনপি মূলত হ্যানিট্র্যাপে পড়া ও আওয়ামী জমানায় অবৈধ সুযোগ-সুবিধা নেওয়া এবং তারেক রহমান বিরোধী নেতাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বিএনপি। এর বহি:প্রকাশ দেখতে পাই- তারেক রহমান যেভাবে দল ও দেশ নিয়ে চিন্তা করেন এবং কথা বলেন; দল ও দেশকে আগামীকে যেভাবে পরিচালনা করতে চান বা করাতে চান- তার ছিটেফোঁটাও মাঠ পর্যায়ে দেখা যায় না। মাঠের বিএনপি ফখরুল-সালাউদ্দীন গং এর নিয়ন্ত্রণে। মিডিয়ার সামনে তাদের লাগামহীন বক্তব্য থেকে এটা স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে- বিএনপি এখন আওয়ামী লীগেরই বি-টিম।
ফখরুল-সালাউদ্দীন-আব্বাস-খসরু -গয়েশ্বর চক্র কোনো ভাবেই চায় না তারেক রহমান দেশে ফিরে আসুক এবং দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিক। তাছাড়া, আওয়ামী লীগ এবং ভারতও চায় না- জিয়া পরিবারের কেউ আবারও রাষ্ট্র পরিচালনায় আসুক। মূলত ঘরের শত্রু বিভীষণদের জন্যই তারেক রহমান এখন দেশে ফিরতে পারছেন না; বা ফিরে আসাটাও ওনার জন্য মোটেও নিরাপদ নয় বলে আমি মনে করি।
১৯৮২-১৯৯০ সময়ে বিএনপির বাঘা-বাঘা প্রায় সব নেতাই দলত্যাগ করে এরশাদের জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়েছিলো। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তখন কেএম ওবায়দুর রহমানকে সাথে নিয়ে এরশাদের পতনের লক্ষ্যে আপোষহীন আন্দোলন-সংগ্রাম করেছিলেন। বড়-বড় নেতাদের ছাড়াই উনি প্রায় একা এই যুদ্ধটা করেছেন। বিএনপি সেসময় হারিয়ে যায় নি। খালেদা জিয়ার দৃঢ় ব্যক্তিত্ব ও নেতৃত্বগুণের জন্যই বিএনপি টিকে যায় এবং সবার ভবিষ্যৎবানী ভুল প্রমাণ করে ১৯৯১ সালে ক্ষমতায় আসে।
বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ ভারতের চারপাশে অন্যসব প্রতিবেশি দেশগুলোর মতোই ভারত-বিরোধী। প্রতিবেশি ও পৃথিবীতে একমাত্র হিন্দরাষ্ট্র নেপালের সরকার ও জনগণও ঘোরভাবে ভারত বিরোধী। এমনটা মূলত ভারতের দাদাগিরি ও আগ্রাসী আচরণের জন্য। ভারতের আধিপত্যবাদ-বিরোধী অবস্থান নিলে- বিএনপি নিরঙ্কুশভাবে সামনে এগিয়ে যাবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
সার্বিক পরিস্থিতিতে, বিএনপিকে বাঁচাতে হলে- অনতিবিলম্বে ফখরুল-সালাউদ্দীন-আব্বাস-খসরু -গয়েশদের চক্রদের নিষ্কৃয় করতে হবে এবং প্রয়োজনে এই চক্রকে দল থেকে বহিষ্কার করতে হবে। দলকে নতুনভাবে ঢেলে সাজাতে হবে।
জনাব তারেক রহমানের প্রতি অনুরোধ- আপনি মায়ের পথ অনসরণ করুন: দল বাঁচাতে আরো কঠোর হোন এবং গাদ্দার গুলোকে ঝেড়ে ফেলুন। অবিলম্বে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী এবং দল ও দেশের প্রতি অনুগত এবং গণমানুষের কাছে যোগ্যতা-সততা-গ্রহণযোগ্যতার সুনাম আছে- এমন ব্যক্তিদের নিয়ে দল পুনর্গঠন করুন। বিএনপিতে আপনার নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব সুসংহত করুন। এতে আপনার দলের এবং দেশেরই মঙ্গল হবে। অন্যথায় বাস্তবিক অর্থে আপনি দলে ‘প্ল্যাস’ হতে পারবেন না; প্রবাসেই থাকতে হবে। এসব ব্যাপারে এখনই সাবধান ও সতর্ক হওয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ দিচ্ছি।
শহীদ জিয়া অমর হোক।
নিউইয়র্ক থেকে-মো: রেযাউল করিম
দুর্নীতি প্রতিরোধ গবেষক ও বিশ্লেষক।